২৮ জুন ২০২২

মরশুমি দেবীর গপ্পো

 #জোলো_গপ্পো

মরশুমি দেবী ভীষণ রকমের পাড়াবেড়ানে মানুষ। সকালবেলার রোদ্দুর মেখে নাইটির ওপরে একটা ওড়না চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েন, পাড়া বেড়াতে। পাড়ার লোকের হাঁড়িতে হাঁড়িতে উঁকি দিয়ে দেখেন কোনো খবর আছে কি না। কলতলার ঝগড়ায় অংশ নেন সাধ্যমত। তাতে গলা সাধা, ব্যাকরণ চর্চা আর মুখ-ছোটানো-কবাডি প্র‍্যাকটিস তিনটেই নিয়মিত হয়ে যায়। পাড়ার পুরনো বাসিন্দা মরশুমি দেবী এ খেলায় একজন পাকা খেলোয়াড়। ঈষৎ ভাঙা কন্ঠস্বরটি আর বাছাই করা শব্দাবলী প্রয়োগের তেজে কেউ ওনার সামনে বেশিক্ষণ টিঁকতে পারে না। কাঁসার বাসনের ঝনঝন ঝঙ্কারে সারা পাড়া বাজতে থাকে। 

মরশুমি দেবীর বর সিজনবাবু তাঁর লজঝড়ে লাল রঙের বাইকে, মাথায় নীল রঙের হেলমেট চাপিয়ে,অপিস যান। তাঁদের ইস্কুল-পড়ুয়া মেয়ের নাম সেয়ানা। পড়াশোনা ছাড়াও খুবই ব্যস্ত সে। হোম-সায়েন্সের টিউশনে যায়। একটু বেলার দিকে, মরশুমি দেবী বর'কে অপিসে রওনা করিয়ে, মেয়েকে টিউশনে পৌঁছে দিয়ে, কোমরের আঁচলে গোঁজা কাঠি আর হাতে মই নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পড়শিদের পাকা ধানের ক্ষেতের দিকে।

এহেন মরশুমি দেবী অনেকগুলো গাছ পোষেন। পশুপাখিদের নিয়মিত খেতে দেন। ডোবার জলের মাছ থেকে মাটিতে কুকুর-বেড়াল থেকে আকাশের কাক-পায়রাগুলো আর পাড়ার পাগলছাগল - নিয়মিত তাঁর কাছে আসে, খেতে। মরশুমি দেবী তাদের সক্কলকে যত্ন করে বসিয়ে খাওয়ান।  গাছেদের পায়ের কাছে সার-জল ঢেলে দেন। গাছেরা ওঁকে দেখলে খুশিতে মাথা নাড়ে। কুকুরদের জন্য আছে আলাদা আলাদা পাত্র। তাতে, তাদের জন্যে পড়ে ভাত-তরকারি । কুকুর-বেড়াল'রা ওঁকে দেখলে খুশিতে ল্যাজ নাড়ে। সবাই শান্তভাবে সারি দিয়ে নিজের নিজের খাবার খায়। মরশুমি দেবী ওঁদের সঙ্গে আদুরে গলায় গল্প করেন। দোয়েল-কোয়েলের কুহু-কলতানে পাড়া ভরে ওঠে।

তাদের খেতে দেওয়ার সময় দৃশ্যতই খুব তৃপ্তি পান মরশুমি দেবী। ওনার মুখখানায়, ঝকঝকে করে মাজা কাঁসার বাসনের রঙ ধরে। 

এ'সব সময়ে, বুঝে উঠতে পারি না, মরশুমি দেবী আসলে, একজন খারাপ মানুষ না কি ভালো মানুষ!



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন