২৬ জানুয়ারী ২০১৯

শ্রীজাত

সিরিয়ালে দেখা ভালোবেসে মাখা প্রিয় সন্দেশ
পালটে যাচ্ছে পতাকার রং আমার স্বদেশ


এরকম করে কে লিখতে পারেন। একমাত্র শ্রীজাত। আমার মনে আছে একটা সময়ে সুবোধ সরকারের কবিতা নিয়ে খুব অবসেসড হয়ে ছিলাম। 'ছেলেটি এবং মেয়েটি' পড়ে তাক লেগে গেছিল। সেই সুবোধ সরকার এখন ধর্মতলার মোড়ে ক্যামেরাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বিফ খাচ্ছেন । মনে করছেন এটা একটা আন্দোলন করা হল। গরুর বা শুয়োরের বা হাঁস-মুরগি বা অন্য যে কোনও পাখি বা জীব জন্তুর মাংস খাওয়া বা না খাওয়া নিয়ে এত চিৎকার চ্যাঁচামেচি করার কী আছে কে জানে !

শ্রীজাত একজন কবির মতই থাকেন অন্তরালে। তাঁর কলম ঝলসে ওঠে মাঝে মাঝে। শব্দগুলো চেতনায় ছাপ ফেলতে থাকে। বন্য শব্দগুলো ভাঙতে জানেন এই কবি।  ছন্দ আর লয় আর অন্তমিল দিয়ে গাঁথতেও জানেন শ্রীজাত। ইদানীং কবি থেকে গীতিকার হওয়ার রাস্তায় হেঁটে গেছেন তিনি। বাংলা গানের লি্রিক্যাল কোয়ালিটি বেড়েছে তাতে।

শ্রীজাতকে প্রথম দেখেছিলাম নন্দন চত্বরে। বছর কুড়ি আগে। তরুণ কবি-শিল্পীদের ওটাই আড্ডা মারার জায়গা কিনা। তখন কফিহাউসের দিন পড়ন্ত। সাউথ সিটির ফুডকোর্ট তখনও জন্মায়নি। নন্দন-অ্যাকাডেমি চত্বরের গাছগুলোতে অনেক পাখি ছিল। আর নন্দনের পেছন দিকটায় ছিল জলে ঘেরা ফোয়ারা। ওদিকটা একটু নিরিবিলি। প্রেমিক-প্রেমিকাদের সঙ্গে বসে দু'চারটে পার্সোনাল কথা বলার থাকলে ওদিকটায় গিয়ে বসা যেত।  অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত নাটক, শিল্প প্রদর্শনী হয়। খুব খিদে পেয়ে গেলে পেছনের ক্যান্টিনটায় আলুর রোল খেয়ে নেওয়া যায়। আর ওখানটাতেই চা-সিগারেটের ধোঁয়ায় এদিক-সেদিক ভেসে বেড়াত রং-তুলি, নতুন লেখা কবিতার লাইন। এইরকম একটা সময়ে শ্রীজাতর সঙ্গে আমার প্রথমবার দেখা। বন্ধুবান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল সে। তখনই ওর একটু আধটু নাম ছড়িয়েছে। ছন্দের ব্যবহার চমকপ্রদ। না, এগিয়ে গিয়ে আলাপ করার ব্যাপারটা ভেবে দেখিনি। অচেনা মানুষের সঙ্গে হঠাৎ গিয়ে আলাপ জমানো আমার স্বভাবে নেই, শুধু সেই কারণেই। কিন্ত 'ফ্যান' বনতে তো আর পারমিশন লাগে না। তাই তার পর অনেক দিন ধরে তার লেখা পড়ছি।  খুঁজেপেতেও। নন্দন চত্বরে আর যাওয়া হয় না। কিন্ত তাতে শ্রীজাতকে খুঁজে পেতে মোটেও অসুবিধে হয় না আমার।

ও হ্যাঁ, একদম শুরুতে লেখা লাইনদুটি শ্রীজাত'র নয়। আমার নিজেরই লেখা। লাইন দুটো মাথায় আসার পর লিখে মনে হয়েছিল কেমন যেন শ্রীজাত-শ্রীজাত মত হয়ে যাচ্ছে। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে এই প্যারাগ্রাফটাই লেখা হয়ে গেল।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন